কুরআনের অর্থ বিকৃত করা হলো পাঠ্যবইয়ে

http://www.dailynayadiganta.com/new/?p=139667

এবার কুরআনের অর্থ বিকৃত করা হলো পাঠ্যবইয়ে
ইহুদি চরিত্রের অনুশীলন : বিশেষজ্ঞদের অভিমত

... মহান আল্লাহকে দেবদেবীর সাথে তুলনা এবং দেবদেবীর নামে জবাই করা পশুর গোশত খাওয়াকে হালাল আখ্যায়িত করার পর এবার পবিত্র কুরআনের অর্থ বিকৃত করার মতো চরম ধৃষ্টতার আরেকটি ঘটনা ধরা পড়েছে নবম-দশম শ্রেণীর ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বইটিতে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান জাতীয় শিাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃক ২০১৩ সালের জন্য প্রণীত ...নবম-দশম শ্রেণীর ইসলাম ও নৈতিক শিা বইয়ে ১০৭ পৃষ্ঠায় একটি পাঠ্য বিষয় হলো ‘জিহাদ ও সন্ত্রাসবাদ’। এখানে সূরা আনফালের ৩৯ নম্বর আয়াতের অর্থ লেখা হয়েছে ‘তোমরা (ইসলাম ও মানবতাবিরোধী শত্র“র বিরুদ্ধে) লড়াই করবে। যতক্ষণ না ফিতনা-ফ্যাসাদ ও অশান্তি চিরতরে নির্মূল হয়ে যায় এবং দ্বীন সামগ্রিকভাবে আল্লাহর জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।’ সূরা আনফালের ৩৯ নম্বর আয়াতটি হলো ‘ওয়া কাতিলুহুম হাত্তা লা তাকুনা ফিতনাতুন ওয়া ইয়াকুনাদ্দিনু কুল্লুহু লিল্লাহ’।

আয়াতের এ অনুবাদ বিষয়ে কুরআন ও ইসলাম শিক্ষাবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের কাছে তুলে ধরা হলে তারা জানান, এখানে পবিত্র কুরআনের আয়াতের অর্থ বিকৃত করা হয়েছে। মানবতাবিরোধী শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করার যে কথা ব্র্যাকেটের মধ্যে বলা হয়েছে, তা আয়াতটির সম্পূর্ণ মনগড়া ও অপব্যাখ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়।

মাসিক মদীনা সম্পাদক ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত বহুল পঠিত মা’রেফুল কুরআনের অনুবাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন খান বলেন, আয়াতে অর্থের বিকৃতি ঘটানো হয়েছে স্পষ্টভাবে।

নরসিংদীর জামেয়া কাসেমিয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা কামালউদ্দিন জাফরী বলেন, পবিত্র কুরআনের আয়াতের এ ধরনের অর্থ বিকৃত করা ইহুদি চরিত্রের অনুশীলন। অতীতে ইহুদিরা তাওরাতের অর্থ বিকৃত করেছে; কিন্তু পবিত্র কুরআনের মূল আয়াত যেহেতু বিকৃত করা সম্ভব নয়, তাই এর অর্থ বিকৃত করার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, এর শাস্তি খুবই ভয়াবহ।

সূরা আনফালের ৩৯ নম্বর আয়াতের সঠিক অর্থ তুলে ধরে মাওলানা কামালউদ্দিন জাফরী বলেন, ‘তোমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাও যতক্ষণ না ফিতনা দূরীভূত হয় এবং আল্লাহর দ্বীন সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়’। তিনি বলেন, আমি যে অর্থের কথা বললাম ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুবাদও ঠিক এ ধরনের, তবে তা সাধু ভাষায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের প্রবীণ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ফজলুর রহমান অনূদিত সরল রীতির কোরআন শরিফ বইয়ে আয়াতটির অর্থ করা হয়েছে ‘আর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক, যাতে ফেতনা (শিরক, কুফর ইত্যাদি অধর্ম) না থাকে আর দ্বীন (এবাদত) সামগ্রিকভাবে আল্লাহর জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়’।

প্রফেসর ফজলুর রহমান বলেন, সংশ্লিষ্ট আয়াতে আল্লাহ যাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে বলেছেন, তারা হচ্ছে কাফির ও মুশরিক। সুতরাং যারা এ ধরনের অনুবাদ করেছে, তারা অপরাধী।

বইটির রচয়িতা যারা : এনসিটিবি কর্তৃক প্রণীত ২০১৩ সালের নবম-দশম শ্রেণীর জন্য পাঠ ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বইটির রচনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুল মালেক ও ড. মুহাম্মদ আবদুর রশীদ এবং আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউছুফ। বইটির সম্পাদনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই একই শিক্ষক কর্তৃক রচিত ও সম্পাদিত নবম-দশম শ্রেণীর জন্য প্রণীত একই বইয়ের ৮২ পৃষ্ঠায় দেবদেবীর নামে জবাই করা পশুর গোশত খাওয়াকে হালাল আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং দেবদেবীকে আল্লাহর সাথে তুলনা করা হয়েছিল। সেই রিপোর্ট গত ৮ মার্চ নয়া দিগন্তে প্রকাশিত হলে দেশজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বইটিতে জিহাদের যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন আলেমসমাজ। ...................................

No comments:

Post a Comment